নজরে বাংলা ওয়েব ডেস্ক : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার দাবি করেন, বিশ্বের প্রথম তাঁদের দেশেই করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করল। রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রক এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের ছাড়পত্র দেওয়ার পরই পুতিনের মেয়ে মারিয়া পুতিন-এর ওপর ভ্যাকসিনের টিকা দেওয়া হল।
উল্লেখ্য, রাশিয়ার মস্কোতে গ্যামেলিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার গত ১৮ জুন প্রথম ধাপে ৩৮ জন স্বেচ্ছাসেবকের শরীরের উপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। প্রথম দলকে ছেড়ে দেওয়া হয় ১৫ জুলাই। এরপর বিভিন্ন ধাপে ১৬০০ মানব শরীরের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে। তাঁদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয় ২০ জুলাই। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে চলা এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেই দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার অবশেষে ভ্যাকসিন টিকাকরণের ছাড়পত্র দিল। এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুতিন জানান, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে এর উৎপাদন শুরু হবে। আশা করা যাচ্ছে অক্টোবর মাসেই টিকাকরণ চালু হয়ে যাবে ওই দেশে। যদিও আমেরিকার পক্ষ থেকে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, সঠিক গাইডলাইন মেনেই তৈরি হোক এই ভ্যাকসিন। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরাও এই ভ্যাকসিন কতটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে তা নিয়ে সন্দিহান!

রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানায়, প্রথম দলের সকলের শরীরেই ভাইরাসের মোকাবিলায় প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়েছে। কারও শরীরে টিকার কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে ঘোষণা করা হয়, টিকার ট্রায়াল সফল হয়েছে। মানুষের শরীরে এই ভ্যাকসিন নিরাপদ ও কার্যকরী। এরপরেই টিকার উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে নানা মহলে। এত কম সময়ের ট্রায়ালে টিকা কীভাবে কার্যকরী বলে ঘোষণা করছে রাশিয়া, সেই নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও।
গ্যামেলিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টারের ডিরেক্টর আলেকজান্ডার গিন্টসবার্গ বলেছেন, অ্যাডেনোভাইরাসের স্ট্রেন থেকে ভেক্টর ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। এই টিকা মানুষের শরীরে ঢুকলে কোনও খারাপ প্রভাব ফেলবে না। কারণ দুর্বল ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরির ক্ষমতা নেই। বরং শরীরের বি-কোষ ও টি-কোষকে সক্রিয় করে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়াকে জোরদার করবে। ইমিউন সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
গ্যামেলিয়ার ডিরেক্টর বলেছেন, প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ হওয়ার পরে এখনও অবধি ভ্যাকসিনের ‘অ্যাডভার্স সাইট এফেক্টস‘ দেখা যায়নি। কারণ এই ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে যে ‘ভাইরাল পার্টিকল’ দিয়ে সেগুলোকে আগে ল্যাবরেটরিতে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়। তাই এই পার্টিকল শরীরে ঢুকে ভাইরাসের অনুকরণ করবে মাত্র, সংক্রমণ ছড়াতে পারবে না।
সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভ্যাকসিনের কয়েক লক্ষ ডোজ তৈরি হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাশকো। আগামী বছরের মধ্যে আরও নানা ডোজে ভ্যাকসিনের ভায়াল চলে আসবে বাজারে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে।