স্বপন কুমার দাস, গোবরডাঙ্গা (উত্তর ২৪ পরগনা) : যে পৌরসভায় প্রশাসকের ভূমিকায় ছিলেন শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন-এর মত গুণীজন, সেই গোবরডাঙ্গা পৌরসভার জন্ম সার্ধ শতবর্ষের স্মৃতিমন্থনকে আরো আলোকময় করে তুলতে বর্ষব্যাপী উদযাপন শুরু হল ১০ কিলোমিটার ম্যারাথন রেস ও মশাল দৌড়ের মধ্য দিয়ে। গোবরডাঙ্গার ১৭ নং ওয়ার্ড বাদে খাটুরা থেকে ম্যারাথন দৌড় শুরু হয়ে গোবরডাঙ্গার প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ড ছুঁয়ে পৌরসভায় গিয়ে শেষ হয়। প্রাক্তন পৌরপ্রধান সুভাষ দত্ত প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। যদিও ২০২০ সালের ২৬ এপ্রিল এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু করোনা অতিমারীর কারণে তা হয়নি। সকল কাউন্সিলরগণের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার বর্ষব্যাপী এই অনুষ্ঠানের শুভ সূচনায় পৌরসভার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শংকর দত্ত ফ্লাগ নাড়িয়ে ম্যারাথন দৌড় শুরুর বাঁশি বাজান। মোট ১৭২ জন প্রতিযোগী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। বছরভর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, গোবরডাঙ্গার বিশিষ্ট গুণীজনদের সংবর্ধনা এবং স্মারক গ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে এই পৌরসভার আনন্দঘন স্মৃতিমন্থন।
চেয়ারম্যান হিসেবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পেরে শংকর দত্ত আক্ষরিক অর্থে খুবই আবেগমথিত হয়ে পড়েন। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে গোবরডাঙ্গা পৌরসভা স্থাপিত হয়। ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার পাশাপাশি জমিদারি শাসন ব্যবস্থা চলছে। সেই সময় ব্রিটিশ সরকার ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা প্রশাসনিক আধিকারিক দিয়ে পৌরসভা পরিচালনা করতো। শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন গোবরডাঙ্গা পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান (১৮৮৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত) যিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অনুরোধে প্রথম বিধবা বিবাহ করেন। এরপর থেকেই চালু হয় বিধবা বিবাহ। সামাজিক প্রথাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সমাজকে এক নতুন পথ দেখান এই সকল মনীষীরা।
ইতিহাস প্রসিদ্ধ এই পৌরসভার বহু ঘটনাবহুল স্মৃতি রয়েছে। বহু বিদ্বজ্জনেরা গোবরডাঙ্গার পৌর নাগরিক ছিলেন যারা বিশ্বের দরবারে রাজ্য তথা দেশকে সামনের সারিতে নিয়ে এসেছেন। এরমধ্যে উল্লেখ করতে হয় প্রমথনাথ বসুর নাম। এই ভূতত্ত্ববিদ-এর তত্ত্বাবধানে জামশেদপুরে টাটা কারখানা তৈরি হয়। প্রথমে জামসেদজী টাটা রাজি হচ্ছিলেন না। পরে যুক্তি দিয়ে এবং সমস্ত দিক উল্লেখ করে প্রমথনাথ বসুর ইচ্ছাতেই জামশেদপুরে তৈরি হয় বিখ্যাত টাটা কারখানা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন লন্ডনে যান সেই সময় প্রমথনাথ বসুর কাছেই অংক এবং ইংরেজি পড়েন। সেই অর্থে তিনি হলেন বিশ্বকবির শিক্ষক মহাশয়।
এই গোবরডাঙ্গায় ছিল ২৩১ বছরের পুরনো জমিদারি শাসন ব্যবস্থা। ১৮২৩ সালে প্রসন্নভবন এবং গোবরডাঙ্গা কালী মন্দির অর্থাৎ মা প্রসন্নময়ী মন্দির চৈত্র সংক্রান্তির দিনে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে ১৯১৪ সালে জমিদারের বড় তরফের দ্বিতল বাড়ি তৈরি হয়। বাগান সহ এই বাড়ি এখনও রয়েছে যা দর্শনার্থীদের জন্য খুবই আকর্ষণীয়। এখানেই রয়েছে সূর্যঘড়ি, ছিল হাতিশালা পিলখানা, নীলকুঠি, সাহেব বাড়ির মতো ঐতিহাসিক স্থান। রয়েছে পৌর টাউনহল যেখানে অনেক নামকরা অভিনেতা-অভিনেত্রী অভিনয় করেছেন। কিছু অবশ্য কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে। দরকার সঠিক সংরক্ষণের।